শেষ রাতের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’



৪টা বাজতে গেল। প্রতি রাতের মত আজও ঘুম আসছে না। ফেসবুক খুলেই দেখলাম ‘উড়ন্ত প্রজাপ্রতি‘ নামের একজন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। বুজলাম না, উড়ে বেড়ালেই হয়। আমার কাছে প্রজাপ্রতির কি ? হোম টাউন খুলনা, এখন থাকে অস্ট্রেলিয়ায়। কে হতে পারে? অ্যালবামে ঢুকলাম। কয়েকটি ছবির পরেই চোখ আটকে গেল। অজান্তেই মন চলে গেল ৬ বছর আগে। খুলনার সিটি কলেজের বারান্দায় বসা একটি ফোন কলে.......... -হ্যালো ভাইয়া, কেমন আছেন ? : আছি ভাল, তোমার খবর কি? -ভাল আছি, আপনি তো বাসায় আসলেন না। আম্মু আজও আপনার কথা বলেছে। : কি বলেছে ? -বলেছে, হিমালয় ছেলেটা কত ভাল। এই বয়সে কত দায়িত্বশীল.....আর তুই ? ওকে একদিন বাসায় নিয়ে আসিস। : তুমি এ-ফোর সাইজ কাগজে কথাটা লিখে তোমার আম্মাকে বল সই করে দিতে। -কেন ? : আমার আম্মুকে দেখাবো। তার ধারণা আমার মত আকাজের ছেলে পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। -আছ্ছা বাসায় এসে নিয়ে যান। : বাসার ঠিকানা তো জানি না। কিভাবে আসবো ? -আমি ৩ বার আপনার ডাইরিতে লিখে দিছি। : ভুলে গেছি। -তাহলে ফোনে বলি লিখে নেন : না, থাক। পড়ে কলেজে আসলে জেনে নেব। -কলেজে গেলে তো আপনাকে খুজেই পাওয়া যায় না। : ভাস্কো গাডা মা‘ আমেরিকা থেকে নৌকায় করে ভারত খুজে বের করলো। তুমি ৪ আঙুল কলেজে আমাকে খুজে বের করতে পারলা না। - ভাইয়া ওনার নাম ভাস্কো ডা গামা। আর কলেজে আপনি ক্লাস করেন না, আপনাকে ফোন দিলে রিসিভও করেন না। : হুম, দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছি।...আচ্ছা এখন কি মনে করে ফোন দিয়েছ, বল ? -এমনি। আচ্ছা ভাইয়া, বলেন তো আমি এখন কোথায় ? : ৪টা অপশন বল। -উহু, হবে না। : আচ্ছা বাসায় না বাইরে এটা বল ? -বাসায় ভাইয়া। : তাহলে তুমি এখন ছাদে। -ওহ! কিভাবে বুজলেন ? : যাদু জানি। -হুমম ঠং। আচ্ছা পারলে বলেন তো ছাদে কি করছি ? : খুব সহজ। একটু আগে বৃষ্টি হইছে। বাসার ছাদে পানি জমে গেছে। তুমি সেই পানিতে হেটে বেড়াচ্ছ। -অদ্ভুত। সত্যিই... ভাইয়া, এটা কিভাবে সম্ভব ? : আমি জানি না, -- আমি একটু ব্যস্ত ফোন রাখতে হবে। -শোনেন ভাইয়া, একটু। আর দুই মিনিট। : বল তারাতারি। -ভাইয়া একটু আগে অনেক বৃষ্টি হইছে। বৃষ্টি দেখেই আপনাকে ফোন দিলাম। আচ্ছা ভাইয়া, বৃষ্টি হলেই আপনার কথা মনে পড়ে কেন ? ওই সময়টায় আমার আব্বু ছিল অসুস্থ। বড় ভাইটা বিদেশে গিয়ে চাকরি না পেয়ে ঘুরছে। এদিকে আব্বুর চিকি/সা, নিজের পড়াশুনা, সংসার চালানোর চিন্তা। সব কিছুই...... আমাকে বয়সের তুলনায় অনেক বেশি ম্যাচুয়েড করে তুলেছিল। বৃষ্টির দিনে তার কেন আমার কথা মনে হয়, এটা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা না। তাই করনীয় নির্ধারণে আমার এক সেকেন্ডও দেরি হয়নি। ফলশ্রুতি পরবর্তী ৬ বছর ফোন দূরের কথা, এক পলক দেখাও হয়নি। আজ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের পাশে ‍দুটি অবশন ছিল। একটিকে বেঝে নিলাম। বুকের বাম পাশে বেশ কিছু সময় ধরে ব্যাথা করছে। বুঝতে পারছি না, সিদ্ধান্তটা সঠিক নিলাম কি-না ?


0 comments:

Post a Comment